ডাউন পাঁচটা পাঁচ ক্যানিং লোকাল
-সৌরভ ঘোষ
“May you have your Attention please
the DN Canning Local wiil be comming
at platform no. two.
কৃপয়া ধ্যান দিজিয়ে কি ডাউন ক্যানিং লোকাল
দো নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর আ রহি হ্যে।
অনুগ্রহ করে শুনবেন ডাউন ক্যানিং লোকাল
দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসছে। “
কাঁধে চামড়ার ফুটিফাটা ব্যাগ,
পরনে নীল শাড়ি এলোমেলো ভাঁজ ।
স্টেশন থেকে কিছুটা দূরেই- অস্থায়ী বাস,
আটপৌরে বৃদ্ধা…
কোঠর গামী চোখ থেকে-
ঠিকরে বেরিয়ে আসছে নেপোলিয়ন।
মুখে বলিরেখায় ফ্রয়েডের স্পষ্ট ছাপ।
এ বয়সে সঞ্চয়িতা কোনো কাজে আসেনি,হতাশা ছাড়া।
প্ল্যাটফর্ম থিকথিক,
উদ্বাস্তু ভিড়, ঘেঁষাঘেঁষি আড্ডা ,
হকার,কাজের মেয়ে,মালপত্র,ছাত্র,কয়েকটা বেহায়া হতভাগা।
বসার জায়গা খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায়,
কংক্রিট বেঞ্চের কোণা…
পাশে ভাটিয়ালি ধরা কালো মেয়ে,
যার মুখের হাসি শোকহরা বার্তা, আনমনা
চোখে তন্বঙ্গী সরলপুঁটির মত ঝিকিমিকি,তণ্ হা…
-এই মেয়ে নাম কি রে তোর?
-বীনা…
-কোথায় থাকিস?এখানে কাজ করিস?
– থাকি কালিকাপুর দিদি,রোজ আসি
এখন ধরা পাঁচটা বাড়ি,
কাপড় কাচা, বাসন মাজা,একটা ঘরে রান্না করা।
-তোর বর কিছু করে? না…
-সে তো থাকে নেশার ঘোরে
-আর ছেলেপুলে?
-বড়টা জুয়া খেলে
ছোটটা পাঁচ,মায়ের কাছে।
-অত ছোট!কি খায়?
– যা পায় দিদি,যখন যাই ঘুমায়
যখন আসি তখনও ঘুমায়
-প্রতিদিন আসিস?
-আসতে হয় কামাই করার জো নেই যে…
-তোর কষ্ট হয় না?
-হয়তো..
পেটের এই’খানটা মোচর দেয় জোরে
দড়ি বেঁধে ব্যাথা দমিয়ে রাখি,দিদি…
-হ্যা’রে,তোর বর তোকে মারে?
-সে তো মারেই।আবার ভালোওবাসে
ভোর চারটে দশ আপ ক্যানিং লোকাল
ওই সাথে থাকে,রাতেও আসে নিতে।
উঠি দিদি, পরে দেখা হবে
ক্যানিং লোকাল ঢুকে গেছে…
বারো কামরা ক্যানিং লোকাল গিলে নেয় হট্টগোল।
নীল শাড়ি বজবজ লাইন,ভাসা অপেক্ষা…
আকাশ প্রদীপ সাধ, নতুন কাজের আশা।
অবাত ঘর,স্বামী স্বেচ্ছা নির্বাসিত প্রাথমিক শিক্ষক,
নিতান্তই অচল,দু-দুবার মাইনর স্ট্রোক,
যক্ষের ধনে অমিত কীর্তি, ছেলের ডিপ্লোমা
তার নতুন সংসার,আ-মরি আমেরিকা…
ছেলের এক ফোনেই বাজিমাত -‘মম অনেক চাপ’।
ষাটোর্ধ্ব মা এই বয়সে কোথায় যাবে?
স্থিতপ্রজ্ঞ স্বামী,
তিনরকমের ওষুধ, কে জোটাবে?
বোনের বর, মার্কেটিং এর কাজ দেখেছে
শিক্ষিত ছেলের মা না হলে-
অন্তত কয়েকটা ঘর নয় হাত পুড়িয়ে …
মনের ভেতর সত্যবাদী মন,উপলব্ধি –
-পেতেই হবে , খুব দরকারী।
না হলে,
কাল ডাউন পাঁচটা পাঁচ ক্যানিং লোকাল,
ইত্যাদি লোকের ভিড়,প্লুটোনিক কোলাহল,
কিছুক্ষণ মৌনতা…
মম মায়া দুরাত্যয়া।
তারপর,
আর কোনোও দিনও দেখা হবে না-রে, বীনা…
ভাষার প্রাঞ্জলতায় মুগ্ধ
ধন্যবাদ